Showing posts with label কিইউ কলাম চারা. Show all posts
Showing posts with label কিইউ কলাম চারা. Show all posts

কিউই ফল এর উপকার

কিইউ কলাম চারা 

 কিউই কিন্তু যেনো তেনো কোনো ফল নয়, এটি দেখতে যেমন আকর্ষণীয়, পুষ্টিগুণও তেমন দারুণ। অস্পষ্ট বাদামি খোলস এবং চকচকে ও উজ্জ্বল সবুজ মাংস বিশিষ্ট কিউই যথেষ্ট রসালো ও মিষ্টি। সামান্য কালো বীজের সাথে সজ্জিত প্রাণবন্ত সবুজ টুকরোগুলি সবসময় ফলের বাটি সাজাতে কিংবা ডেজার্ট তৈরীতে এক অনন্য ভূমিকা রাখে। কিউই তার দৃষ্টিনন্দনীয় সৌন্দর্য্য এবং দারুণ স্বাদ এর জন্য অন্যসব ফলের মধ্যে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।

মূলত এর উৎপত্তি চীনে হলেও, প্রাচীন কাল থেকেই কিউই তার ঔষধি গুণাবলীর জন্য বেশ মূল্যবান। ঐতিহাসিকভাবে, এটি নিউজিল্যান্ডের জাতীয় ফল হিসাবে পরিচিত এবং তার পুরাতন ডাকনাম – ইয়াং টাও অথবা চাইনিজ গুজবেরী’র পরিবর্তে বিশ্বে ‘কিউই’ হিসাবে পরিচিতি লাভ করে।

মিশনারিগণ কিউইফ্রুট সর্বপ্রথম নিউজিল্যান্ডে আনেন এবং সেখানে এটি এতোই জনপ্রিয়তা অর্জন করে যে সেখানে বাণিজ্যিকভাবে এর চাষ শুরু হয় এবং ‘কিউই’ (তাদের জাতীয় পাখির সাথে সাদৃশ্যযুক্ত) নামে বাজারজাত করা হয়। পরবর্তীতে ইউরোপীয়ান এবং আমেরিকানরা এর জনপ্রিয়তায় এতোটাই ডুবে যায় যে তাদের ডেজার্ট ও অন্যান্য খাবারের আইটেমগুলিতে কিউই ব্যবহার শুরু করে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগ (ইউএসডিএ) এর মতে, ১০০ গ্রাম কিউই ফ্রুটে রয়েছে ১৪.৬৬ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট, ১.১৪ গ্রাম প্রোটিন, ০.৫ গ্রাম ফ্যাট, ৩ গ্রাম ফাইবার এবং ৬১ ক্যালোরি শক্তি। কিউই সত্যিই একটি চমকপ্রদ ফল যা প্রায়শই ফলের বাটি, সালাদ কিংবা স্মুদি তৈরীতে ব্যবহৃত হয়।

এটি মাংস রান্নায় ‘টেন্ডারাইজিং এজেন্ট’ হিসাবে কাজ করে এবং সাধারণত রোস্ট ও তরকারি তৈরীতেও এটির ব্যবহার রয়েছে। তবে কিউই কাঁচা ফল হিসাবেই বরং বেশী উপকারী। আপনি যদি প্রতিদিনের ডায়েটে কিউই যোগ করেন তবে এটি দারুণভাবে আপনার স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটাবে।

আপেলকে ‘অলৌকিক ফল’ হিসাবে বিবেচনা করা হলেও কিউইফ্রুট প্রয়োজনীয় ভিটামিন এবং খনিজ পদার্থে ভরপুর এবং পুরোদমে আপনার পুষ্টির চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম। এখানে কিউই ফলের বিশেষ কিছু উপকারীতা দেওয়া হলো:

ভিটামিন সি এর উচ্চ উৎস: আপনি যদি ভাবেন যে লেবু এবং কমলা ভিটামিন সি এর সর্বোচ্চ উৎস, তবে আবার চিন্তা করুন! কিউই ফলের পুষ্টি বিভাজন অনুসারে, প্রতি ১০০ গ্রামে ১৫৪ শতাংশ ভিটামিন সি রয়েছে, যা লেবু এবং কমলার চেয়ে দ্বিগুণ! ভিটামিন সি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসাবে কাজ করে ও ফ্রি র‌্যাডিকেলগুলি দূর করে যা প্রদাহ বা ক্যান্সারের কারণ হতে পারে। এমনকি এটি ক্ষতিকারক রোগজীবাণুর বিরুদ্ধে শরীরে প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করে।

ঘুমবর্ধক: ঘুমে সমস্যা হচ্ছে? তাইপেই মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা অনুসারে, “কিউই ফলে অনেক ওষধি গুণাগুণ রয়েছে, যার মধ্যে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং সেরোটোনিন ঘুম সংক্রান্ত যে কোন সমস্যায় বেশ উপকারী।” তাইতো ঘুমানোর এক ঘন্টা আগে দু’টি কিউই ফল ঘুম বর্ধক হিসাবে কাজ করে।

হজমের সহায়ক: কিউই ফলের মধ্যে ‘অ্যাক্টিনিডেইন’ নামক এনজাইম রয়েছে যা এর পেঁপের মধ্যকার পেপেইন এর মত হজম প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করে। এ কারণেই এটি সাধারণত মাংসের টেন্ডারিজার হিসাবে ব্যবহৃত হয়। এছাড়াও এটি শরীরের প্রোটিন হজমে সহায়তা করে এবং অন্ত্রের সমস্যায় আক্রান্ত রোগীদের সমস্যা দূর করে থাকে।

ডায়েট্রি ফাইবারের ভাল উৎস: এই বিদেশী ফলটি ডায়েটার ফাইবারযুক্ত, যা অসংখ্য রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে। লিডস ইউনিভার্সিটির এক সমীক্ষা অনুসারে, “ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার ক্রমবর্ধমান হৃদরোগ (সিভিডি) এবং করোনারি হার্ট ডিজিজ (সিএইচডি) উভয়ের ঝুঁকি হ্রাস করতে পারে।” ম্যাসাচুসেটস মেডিকেল স্কুলের গবেষকদের মতে, উচ্চতর ফাইবারযুক্ত খাবারগুলি দীর্ঘক্ষণ পাকস্থলীতে থাকে এবং রক্তচাপ, কোলেস্টেরল, ব্লাডস্যুগার নিয়ন্ত্রণ ও ওজন হ্রাস করে এবং ডায়াবেটিস রোগীদের কিউই খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।

ফোলেটের ভাল উৎস: চীনদেশে ঔষধি গুণগুলির জন্য কিউই যথেষ্ট মূল্যবান। এটি ফোলেটের একটি ভাল উৎস, যা গর্ভবতী মহিলাদের জন্য উপকারী কারণ এটি ভ্রূণের বিকাশে সহায়তা করে এবং সুস্বাস্থ্য নিশ্চন্ত করে। এটি ক্রমবর্ধমান বাচ্চাদের জন্য বিশেষ উপকারী

ভিটামিন এবং খনিজ পদার্থের পাওয়ার হাউজ: কিউই ফল ভিটামিন এ, বি ৬, বি ১২, ই, এবং পটাসিয়াম, ক্যালসিয়াম, আয়রন ও ম্যাগনেসিয়াম সমৃদ্ধ যা শরীরের রক্ত ​​সঞ্চালন, স্ট্রেস কমানো, দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি, মজবুত হাড় এবং দাঁত গঠন করে। কিউইফ্রুটের প্রতি ১০০ গ্রামে ৩১২ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম থাকে যা ব্লাডপ্রেশার নিয়ন্ত্রণ করে এবং ম্যাগনেসিয়াম স্নায়ু ও পেশী সঞ্চালনে সহয়তা করে।

ত্বকের সৌন্দর্য্য রক্ষাকারী: কিউই প্রাকৃতিকভাবে ক্ষারীয়। অর্থাৎ এটি অ্যাসিডযুক্ত খাবারের প্রভাবগুলি প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে। এটি রক্তের পিএইচ এর ভারসাম্য ঠিক রাখে যা আপনাকে প্রাণবন্ত ও শক্তিতে ভরপুর করে তুলতে এবং ত্বকের তারুণ্যতা বজায় রাখতে সহায়তা করে। এর মধ্যকার ভিটামিন (সি এবং ই) ত্বকের জন্য দারুণ উপকারী যা ত্বকের ক্ষয় রোধ করে অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট হিসাবে কাজ করে। কিউই ফলের কয়েকটি স্লাইস আপনি ত্বকের নিত্যদিনকার যত্নেও ব্যবহার করতে পারেন। এসকল গুণাবলী ছাড়াও, কিউইফ্রুটে ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, ক্যারোটিনয়েডস, পলিফেনল থাকে যা হার্ট সুস্থ্য রাখতে বেজায় উপকারী।

মোদ্দাকথা, কিউইফ্রুটের উপকারীতা অগণিত, যা আপনার ডায়েটে যুক্ত হলে আপনার সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে যথেষ্ট ভূমিকা পালন করবে।


লাবাং