লিচু চায়না ৩ কলাম চারা |
মৌসুমি ফল হিসেবে লিচু অসম্ভব উপকারি একটি ফল। প্রতিটি লিচুতে প্রায় ৫-১০ শতাংশ ক্যালসিয়াম বিদ্যমান থাকে। এছাড়া লিচুতে যথেষ্ট পরিমাণ ভিটামিন সি,ভিটামিন বি১ , ভিটামিন বি২ , খনিজ লবণ,থিয়ামিন, নিয়াসিন এবং এন্টি অক্সিডেন্ট বিদ্যমান থাকে।
লিচুতে প্রচুর ফাইবার থাকে, তা রাফেজের জোগান দেয় শরীরে, হজমের পক্ষেও অত্যন্ত সহায়ক৷ তাই ওজন বেড়ে যাওয়ার ভয় পাবেন না, নিশ্চিন্তে লিচু খান৷ বিশেষ করে খাওয়ার পর যাঁদের একটু মিষ্টি ছাড়া চলে না, তাঁরা ডেজ়ার্ট হিসেবে লিচু খেতে পারেন৷ স্ন্যাক্স হিসেবেও গোটা দশেক লিচু খেলে দেখবেন খিদের বোধ আপনাকে মোটেও বিব্রত করছে না আর৷ লিচু দিয়ে শরবত তৈরি করলে খেতে খুব ভালো লাগে, লিচুর পায়েসও স্বর্গীয় স্বাদের হয়৷ সবচেয়ে বড়ো কথা হচ্ছে, যেহেতু ফলটা নিজেই মিষ্টি, তাই খুব বেশি চিনি না দিলেও খেতে ভালো লাগে৷
অতি উচ্চমাত্রার ক্যালসিয়ামের বসবাস এই ফলে। ক্যালসিয়াম এমন একটি খাদ্য উপকরণ, যা হাড়, দাঁত, চুল, ত্বক, নখের জন্য ভীষণ জরুরি। অতি উচ্চমাত্রার ভিটামিন ‘সি’র আশ্রয়স্থল এই লিচু। ভিটামিন ‘সি’ মৌসুমি অসুখগুলো থেকে রক্ষা করে, ত্বক, চুলের পুষ্টি জোগায়। প্রচন্ড ক্ষতিকর আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মি থেকে শরীরকে রক্ষা করে। এতে রয়েছে নিয়াসিন ও রিবোফ্লাভিন নামক ভিটামিন ‘বি’ কমপ্লেক্স। ভিটামিন ‘বি’ কমপ্লেক্স শরীরের জ্বালা পোড়া, দুর্বলতা দূর করে। লিচুর ভিটামিন ‘এ’ রাতকানা কর্ণিয়ার অসুখ, চোখ ওঠা, চোখের কোনা ফুলে লাল হয়ে যাওয়া, জ্বরঠোসা ( জ্বরের পরে ঠোটের দুই কোণাতে বা উপরে নিচে ঘা হয় ), জিহ্বার ঘা, জিহ্বার চামড়া ছিলে যাওয়া এই রোগগুলো প্রতিরোধ করে।
*ক্যান্সার নির্মুলে লিচুর অবদান রয়েছে। লিচু ক্যান্সারের নোভিস কোষ গুলিকে ধংস করার ক্ষমতা রাখে। * লিচুতে অলিগোনাল নামক বিশেষ উপাদান থাকে যা নাইট্রিক অক্সাইড তৈরী করে । ফলে রক্তনালী প্রসারিত হয় এবং রক্ত চলাচলের ব্যাবস্থার উন্নয়ন ঘটে। * লিচুতে ভিটামিন সি এর উপস্থিতি থাকে ফলে ত্বকের উজ্জলতা বৃদ্ধি পায় এবং শরিরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে। * লিচুতে রয়েছে ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট যা কোষের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি হ্রাস করে। * লিচুতে প্রচুর ফাইবার ও পানি থাকে যা হজমে সাহায্য করে এবং ওজন কমাতে ও সাহায্য করে। * লিচুতে থাকা কপার হেয়ার ফলিকল কে উত্তেজিত করে ফলে চুলের বৃদ্ধি ঘটে। * লিচু শরিরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে। * মনভুলো রোগীদের/ মস্তিষ্কের রোগীদের জন্য লিচু বেশ উপকারি ফল। মাত্রাতিরিক্ত লিচু খেলে যেসব পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে । ১) রক্তের গ্লুকোজ কমে যায়। লিচু আমাদের রক্তের গ্লুকোজ কমাতে সহায়তা করে। তাই পরিমাণে বেশি খেয়ে ফেললে তা হাইপোগ্লাইসেমিয়া করতে পারে বিশেষত ইফতারের সময় এমনটি করলে। যাদের ডায়াবেটিস আছে, যারা ওষুধের মাধ্যমে এটি নিয়ন্ত্রণ করেন, তারা লিচু গ্রহণে সাবধান থাকা উচিত। কারণ ওষুধ এমনিতেই রক্তে গ্লুকোজ কমিয়ে রাখে সঙ্গে লিচুও যদি একই কাজ করে তাহলে যেকোনো বিপত্তি ঘটতে পারে। ছোট বাচ্চারা লিচু গ্রহণ করলে কোনও অবস্থাতেই খালি পেটে খাওয়া উচিত নয়। পরিণাম ভয়াবহ হতে পারে এতে। ২) রক্তচাপ পড়ে যাওয়া- মাত্রাতিরিক্ত লিচু খেলে রক্তচাপ অস্বাভাবিকভাবে কমে যেতে পারে। লক্ষণ হিসাবে শ্বাসকষ্ট হওয়া, বুক ধড়ফড় করা, মাতাহ ঘুরানো, বমি ভাব ইত্যাদি হতে পারে। ৩) লিচু একটি গরম ফল- গরম ফল হওয়াতে বেশি পরিমাণে লিচু খেলে আমাদের শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রার ব্যালেন্স নষ্ট হয় ফলে গলা ব্যাথা হওয়া, মুখের ভিতরে ক্ষত হওয়া এমন কি নাক দিয়ে রক্তপাতও হতে পারে বিশেষ করে আমাদের দেশের বর্তমান আবহাওয়ার কারনে। ৪) লিচু খেলে নানা রোগের প্রাদুর্ভাব বেড়ে যেতে পারে- লিচু একটানা বেশ কয়েকদিন পরিমানের বেশি লিচু খেলে নানা রোগ যেমন রিউমাটয়েড আরথ্রাইটিস, মাল্টিপল স্ক্লেরসিস, লুপাস ইত্যাদি রোগ থাকলে তা বেড়ে যেতে পারে অতিমাত্রায় আমাদের ইমিউনিটি বেড়ে যাওয়ার ফলে। ৫) সার্জারির রোগীদের অতিরিক্ত লিচু খাওয়ার ঝুঁকি: রক্তচাপ এবং রক্তের গ্লুকোজের ওপর সরাসরি প্রভাব থাকাতে যাদের সার্জারির প্রয়োজন তারা সার্জারির পূর্বের দুই সপ্তাহ এবং পরের দুই সপ্তাহ লিচু খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত। ৬) লিচু ওজন বৃদ্ধি করে- প্রতি ১০০ গ্রাম লিচুতে ৬৬ ক্যালোরি রয়েছে। পরিমাণে বেশি লিচু খেলে তাই যে পরিমাণ ক্যালোরি জমা হয় তা সঠিকভাবে ব্যবহার করতে না পারলে তাতে আমাদের ওজন বেশ ভালোভাবেই বৃদ্ধি পায়। ৭) অন্যন্য প্রয়োজনীয় উপাদানের ঘাটতি- লিচুতে প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, জরুরি ফ্যাটি এসিড নেই। ফলে বেশি পরিমাণে লিচু খেলে তা শরীরের স্বাভাবিক ব্যালেন্স নষ্ট করে। তাই আমাদের সবার উচিত পরিমিতভাবেই লিচু খাওয়া।