জাবূটীকাবা

জাবুটিকাবা একধরনের ব্রাজিলিয়ান গ্রীষ্মকালীন ফল। ব্রাজিলিয়ান আঙুর গাছ নামেও পরিচিত এটি। প্রচলিত আঙুর গাছের সঙ্গে এর কোনো মিল নেই। তবে মিল আছে ফলের রং ও আকৃতিতে। ফলটিকে দ্রাক্ষাও বলা হয়।
প্রত্যেক গাছের ফল সাধারণত ধরে গাছের শাখা-প্রশাখার প্রান্তে। কিন্তু জাবুটিকাবা একেবারেই ভিন্ন। ফলের মৌসুমে পুরো গাছের শরীরই থাকে ফলে মোড়া। গাছের কাণ্ডে হয় এই ফল।
দক্ষিণ ব্রাজিলের মিনাস, জারিয়াস ও সাওপাওলোতে সাধারণত এ ফলটির দেখা মেলে। পুরো গাছের শরীরজুড়ে ফল হয় বলে জাবুটিকাবা গাছ অসম্ভব সুন্দর এক রূপ ধারণ করে।
জাবুটিকাবা আদ্র, উর্বর ও সৈকতের ক্ষারীয় মাটির জন্য উপযোগী। এর বৈজ্ঞ‍ানিক নাম পিলিনিয়া ক্যালিফ্লোরা (Plinia cauliflora)। পানির ব্যবস্থা করতে পারলে পুরো গ্রীষ্মকাল জুড়েই ফল পাওয়া সম্ভব। ফুলের রং সাদা। ফুল বের হয় সরাসরি গাছের মূল কাণ্ড থেকে। এখানেই অন্য সব ফল থেকে আলাদা জাবুটিকাবা।
এ গাছ খুবই কম বর্ধনশীল। ফলে বনসাইয়ের জন্য প্রচুর ব্যবহার হয়।কলমের চারা থেকে ফল হতে সময় লাগে ৫ বছর। আর বীজ থেকে সরাসরি গাছ হলে ফল হতে সময় নেয় ১০ থেকে ২০ বছর। এজন্য এ ফল চাষে আগ্রহ কম। তবে ফলটি বেশ জনপ্রিয়।
ফলগুলো হয় গোলাকার। কাঁচা অবস্থায় সবুজ, পাকলে রক্তবেগুনি রং ধারণ করে। দেখতে অনেকটা আমলকির মতোও বলা যায়। প্রতিটি ফলে চারটি করে বিচি থাকে। ভেতরের মাশ মিষ্টি, রসালো সাদা অথবা গোলাপি হয়।
সাধারণভাবে বছরে এক অথবা দুইবার ফুল ও ফল হয়। কিন্তু যখন চাষ করা হয় তখন ফুল বেশি আসে এবং সারা গ্রীষ্মকাল ধরে পাওয়া যায়। ফলের মৌসুমে মিনাস ও সাওপাওলো শহরের রাস্তাজুড়ে নেটের ব্যাগে সুদৃশ্য জাবুটিকাবা ফল বিক্রি হয়।
গাছ থেকে পাড়ার পর ফলগুলো দুই থেকে তিনদিন তাজা রাখা যায়। ৩-৪ দিন পার হলে ফল প্রক্রিয়াজাত করে জ্যাম, টার্ট, ওয়াইন তৈরিতে ব্যবহার হয়।
অল্প সময় তাজা থাকে বলে জাবুটিকাবা দেশের সব স্থানে পাওয়া যায় না। শুধু যে এলাকায় চাষাবাদ হয় সে এলাকাতেই এটা দেখা যায়।
ফলটির ওষুধি গুণও কম নয়। ঐতিহ্যগতভাবে এর শুকনো ফলের খোসা থেকে তৈরি ক্বাথ বা পাঁচন হাঁপানি, ডায়রিয়া ও টনসিলের দীর্ঘ প্রদাহ সারাতে বেশ কার্যকর।
এছাড়া ফলটি এন্টি অক্সিডেন্ট এবং ক্যানসার প্রতিরোধক উপাদান সমৃদ্ধ। মিনাস জারিয়াস, সাবারা শহরে মৌসুমে এত ফল ফলে যে অ্যাসোসিয়েশন প্রতিবছর জাবুটিকাবা উৎসব করে।

No comments:

Post a Comment

লাবাং