এভোকাডোর উপকারিতা

 অ্যাভোক্যাডো কলাম চারা 

 অ্যাভোক্যাডো একটি চমৎকার ফল। বেশিরভাগ ফলের মধ্যে মূলত কার্বোহাইড্রেট থাকে তবে অ্যাভোক্যাডোতে স্বাস্থ্যকর ফ্যাটের পরিমাণ বেশি।

অ্যাভোক্যাডো ফলের উপকারীতা অগণিত। এখানে অ্যাভোক্যাডোর ১২ টি উপকারীতা দেওয়া হলো যেগুলি বৈজ্ঞানিক গবেষণা দ্বারা সমর্থিত –

১. অবিশ্বাস্য রকমের পুষ্টিকর একটি ফল:

অ্যাভোক্যাডো গাছের ফল অ্যাভোক্যাডো যা  বৈজ্ঞানিকভাবে পার্সিয়া আমেরিকানা নামে পরিচিত। এই ফলটি তার উচ্চ পুষ্টির মানের জন্য যথেষ্ট মূল্যবান এবং এর অনন্য স্বাদের কারণে বিভিন্ন খাবার তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।

আজকাল, অ্যাভোক্যাডো স্বাস্থ্য সচেতন ব্যক্তিদের কাছে অবিশ্বাস্যভাবে একটি জনপ্রিয় খাবারে পরিণত হয়েছে। অবাক করা সব স্বাস্থ্যগুণের জন্য একে ‘সুপার ফুড’ বললেও ভূল হবেনা।

অ্যাভোক্যাডো আকার এবং রঙে বিভিন্ন রকমের হয় – নাশপাতি আকৃতির থেকে গোলাকার এবং সবুজ থেকে কালো পর্যন্ত। এগুলি ৮ আউন্স (২২০ গ্রাম) থেকে ৩ পাউন্ড (১.৪ কেজি) পর্যন্তও হতে পারে।আকৃতি পিয়ারের মতো এবং অ্যালিগেটরের মতো সবুজ রঙের ত্বকের জন্য একে “অ্যালিগেটর পিয়ার” নামেও ডাকা হয়।ফলের অভ্যন্তরীণ হলুদ-সবুজ মাংসল অংশ খাওয়া হয়, তবে খোসা এবং বীচি ফেলে দেওয়া হয়। এতে ২০ রকমের ভিটামিন এবং খনিজ সহ বিভিন্ন ধরণের পুষ্টি উপাদান রয়েছে। মাত্র ৩.৫ আউন্স বা ১০০ গ্রাম অ্যাভোক্যাডোতে কতোটা পুষ্টি উপাদান রয়েছে চলুন সেটি জেনে আসি –

ভিটামিন কে: ২৬%

ফোলেট: ২০%

ভিটামিন সি: ১৭%

পটাশিয়াম: ১৪%

ভিটামিন বি-৫: ১৪%

ভিটামিন বি-৬: ১৩%

ভিটামিন ই: ১০%

এছাড়াও এতে স্বল্প পরিমাণে ম্যাগনেসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, তামা, আয়রন, দস্তা, ফসফরাস এবং ভিটামিন এ, বি-১ (থায়ামিন), বি-২ (রিবোফ্লাভিন) এবং বি-৩ (নিয়াসিন) রয়েছে।

১৬০ ক্যালরিশক্তি, ২ গ্রাম প্রোটিন এবং ১৫ গ্রাম পরিমাণ স্বাস্থ্যকর ফ্যাট এর সুন্দর সম্মীলন ঘটেছে এই ফলে। যদিও এটিতে ৯ গ্রাম কার্বস রয়েছে, যার মধ্যে ৭ টি ফাইবারযুক্ত এবং বাকি ২টি “নেট” কার্বস, যা এটিকে লো কার্বযুক্ত ফ্রুট হিসাবে পরিচিতি দেয়। অ্যাভোক্যাডোতে কোনো কোলেস্টেরল বা সোডিয়াম থাকে না এবং স্যাচুরেটেড ফ্যাট কম থাকে।

২. কলার চেয়েও বেশি পটাশিয়াম সমৃদ্ধ:

পটাশিয়াম এমন একটি পুষ্টি উপাদান যা বেশিরভাগ মানুষ পর্যাপ্ত পরিমাণে পায় না। এই পুষ্টি আপনার দেহের কোষগুলিতে বৈদ্যুতিক গ্রেডিয়েন্টগুলি বজায় রাখতে এবং বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কার্য সম্পাদনে সহায়তা করে।

অ্যাভোক্যাডোতে পটাশিয়ামের পরিমাণ খুব বেশি। একটি ৩.৫-আউন্স (১০০-গ্রাম) কলাতে ১০% এবং অ্যাভোক্যাডোতে ১৪% পটাশিয়াম থাকে।

বেশ কয়েকটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, উচ্চ পটাশিয়াম রক্তচাপ হ্রাস করে যা হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক এবং কিডনি ফেইলিউরের ঝুঁকি কমায়।

৩. হার্ট এর জন্য উপকারী মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ:

অ্যাভোক্যাডো একটি উচ্চ ফ্যাটযুক্ত খাবার। প্রকৃতপক্ষে, এতে থাকা ক্যালোরিগুলির ৭০% আসে ফ্যাট থেকে। তবে এগুলিতে কোনও চর্বি থাকে না।

অ্যাভোক্যাডোতে থাকা বেশিরভাগ ফ্যাট হলো অলিক অ্যাসিড (একটি মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড) যা অলিভ অয়েলের প্রধান উপাদান এবং এর বেশ কিছু উপকারীতা রয়েছে।

অলিক অ্যাসিড জ্বালাপোড়া কমাতে এবং ক্যান্সার কোষ নিয়ন্ত্রণে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।

অ্যাভোক্যাডোতে থাকা ফ্যাটগুলি অনেকটা তাপ বিরোধী, তাই অ্যাভোক্যাডো তেল রান্নার জন্য বেশ স্বাস্থ্যকর এবং নিরাপদ।

৪. উচ্চ ফাইবার সমৃদ্ধ:

অ্যাভোক্যাডোতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে। ফাইবার হলো এমন একটি পুষ্টি উপাদান যা ওজন হ্রাসে অবদান রাখে, রক্তে শর্করার স্পাইকগুলি হ্রাস করে এবং সাথে আরো অনেক রোগের ঝুঁকি কমায়।

দ্রবণীয় এবং অদ্রবণীয় ফাইবারের মধ্যে কিন্তু পার্থক্য আছে।

দ্রবণীয় ফাইবার আপনার অন্ত্রের বন্ধুত্বপূর্ণ অন্ত্র-ব্যাকটেরিয়ার খাদ্য, যা শরীরের অনুকূল কার্যকারিতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

প্রতি ৩.৫-আউন্স (১০০-গ্রাম) অ্যাভোক্যাডোতে ৭ গ্রাম ফাইবার থাকে, যা RDA এর ২৭%।

অ্যাভোক্যাডোতে থাকা প্রায় ২৫% ফাইবার দ্রবণীয় এবং ৭৫% অদ্রবণীয়।

৫. অ্যাভোক্যাডো কোলেস্টেরল এবং ট্রাইগ্লিসারাইড স্তরকে কমিয়ে দেয়:

বিশ্বে মৃত্যুর সর্বাধিক সাধারণ কারণ হৃদরোগ। কোলেস্টেরল, ট্রাইগ্লিসারাইডস, রক্তচাপ হৃদরোগের প্রধান কারণ। আটটি গবেষণায় এইসকল ঝুঁকির উপর অ্যাভোক্যাডোর প্রভাব পরীক্ষা করা হয়েছে।

এই অধ্যয়নগুলিতে প্রমাণিত হয়েছে যে অ্যাভোক্যাডো –

কোলেস্টেরলের মাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করে।

২০% পর্যন্ত রক্তের ট্রাইগ্লিসারাইড হ্রাস করে।

এলডিএল কোলেস্টেরল ২২% পর্যন্ত কমিয়ে আনে।

এইচডিএল (ভালো) কোলেস্টেরল ১১% পর্যন্ত বাড়িয়ে দেয়।

৬. নিয়মিত অ্যাভোক্যাডো গ্রহণকারীরা সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হয়ে থাকে:

একটি সমীক্ষায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে NHANES জরিপে অংশ নেওয়া ১৭,৫৬৭ জন অংশগ্রহণকারীদের কাছ থেকে ডেটা বিশ্লেষণ করা হয়।

এই জরিপে অ্যাভোক্যাডো গ্রাহকরা অনেক স্বাস্থ্যবান ছিলেন। তাদের পুষ্টির পরিমাণ অনেক বেশি ছিল এবং বিপাকীয় সিনড্রোম হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় অর্ধেক ছিল, যা হৃদরোগ এবং ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমিয়ে দেয়।

যে সকল ব্যক্তি নিয়মিত অ্যাভোক্যাডো খেয়েছিলেন তাদের ওজন কম ছিল, বিএমআই কম ছিল এবং পেটের মেদও উল্লেখযোগ্যভাবে কম ছিল। তাদের এইচডিএল (ভালো) কোলেস্টেরলের পরিমাণ ও ছিলো উচ্চতর।

যাইহোক, শুধুমাত্র অ্যাভোক্যাডো গ্রহণ ই যে এই ব্যাক্তিগণের ভাল স্বাস্থ্যের একমাত্র কারণ এমন কোনো গ্যারান্টি কিন্তু নেই।

৭. অ্যাভোক্যাডোর মধ্যকার ফ্যাট আপনার পুষ্টি শোষণে সহায়তা করে:

যখন পুষ্টির কথা আসে তখন গ্রহণের বিষয়টি কেবল গুরুত্বপূর্ণ নয়। আপনাকে এই পুষ্টিগুলি শোষণেও সক্ষম হতে হবে – এগুলি পাচনতন্ত্র থেকে শরীরে নিয়ে যেতে হবে, যেখানে সেগুলি ব্যবহৃত হয়ে থাকে।

কিছু পুষ্টিগুণ ফ্যাট-দ্রবণীয় অর্থাৎ ব্যবহারের জন্য তাদের ফ্যাটের সাথে একত্রিত করা প্রয়োজন।

অ্যাভোক্যাডোতে ফ্যাট-দ্রবণীয় ভিটামিন এ, ডি, ই, কে এবং পাশাপাশি ক্যারোটিনয়েডের মতো এন্টিঅক্সিড্যান্টও রয়েছে।

একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, সালাদ বা রান্নায় অ্যাভোক্যাডো বা অ্যাভোক্যাডো তেল যোগ করা হলে এটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শোষণকে ২.৬- থেকে ১৫% পর্যন্ত বৃদ্ধি করতে পারে।

সুতরাং, অ্যাভোক্যাডো কেবল উচ্চ পুষ্টিকরই নয়, এটি আপনার গ্রহনকৃত অন্যান্য সকল খাবারের পুষ্টির মান চমৎকারভাবে বাড়িয়ে তুলতে পারে।

আপনি যখন শুধু ভেজিটেবল খান, তখন স্বাস্থ্যকর ফ্যাট অন্তর্ভুক্ত করার একটি দারুণ উপায় অ্যাভোক্যাডো।

৮. অ্যাভোক্যাডোতে শক্তিশালী এন্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যা চোখকে রাখে সুরক্ষিত:

অ্যাভোক্যাডো কেবল অন্যান্য খাবার থেকে এন্টিঅক্সিডেন্ট শোষণের ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে না, এটি উচ্চ মাত্রায় এন্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ।

এর মধ্যে রয়েছে ক্যারোটিনয়েডস লুটেইন এবং জেক্সানথিন, যা চোখের স্বাস্থ্যের জন্য অবিশ্বাস্যভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

বয়স্কদের ছানি এবং ম্যাকুলার অবক্ষয় একটি সাধারণ ব্যাপার, যেগুলি প্রতিরোধে অ্যাভোক্যাডো সহায়তা করতে পারে।

অতএব, অ্যাভোক্যাডো খাওয়ার ফলে দীর্ঘমেয়াদে আপনার চোখ থাকবে সুরক্ষিত।

৯. অ্যাভোকাডো ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করতে পারে:

ক্যান্সার চিকিৎসা এবং প্রতিরোধে অ্যাভোক্যাডো যথেষ্ট উপকারী।

টেস্ট-টিউব সমীক্ষায় পরামর্শ দেওয়া হয়েছে যে, এটি মানব লিম্ফোসাইটে কেমোথেরাপির পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হ্রাস করতে সহায়তা করতে পারে।

অ্যাভোক্যাডো প্রোস্টেট ক্যান্সার কোষগুলির বৃদ্ধিতে বাধা দেয়।

 মনে রাখবেন যে, এই সমীক্ষাগুলি শুধুমাত্র কিছু বিচ্ছিন্ন কোষগুলিতে করা হয়েছিল।

১০. অ্যাভোক্যাডো এক্সট্র্যাক্ট বাতরোগ থেকে মুক্তিতে সহায়তাকারী:

আর্থ্রাইটিস পশ্চিমা দেশগুলিতে একটি সাধারণ ব্যাধি। এটি একটি দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা যা মানুষের সারা জীবন ধরে থাকে।

একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে যে অ্যাভোক্যাডো এবং সয়াবিন তেল এক্সট্র্যাক্ট অস্টিওআর্থারাইটিস হ্রাস করতে পারে।

১১. ওজন কমাতে দারুণ কাজ করে অ্যাভোক্যাডো:

অ্যাভোক্যাডো হলো ওজন কমানোর উপযোগী খাবার।

একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, খাবারের সাথে অ্যাভোক্যাডো খেলে ২৩% বেশি তৃপ্তি পাওয়া যায় এবং যারা এই ফলটি খান না তাদের তুলনায় পরবর্তী ৫ ঘন্টায় তাদের খাওয়ার ইচ্ছা ২৮% কম হয়।

সুতরাং আপনার ডায়েটে অ্যাভোক্যাডো অন্তর্ভুক্ত করলে এটি স্বাভাবিকভাবেই আপনাকে কম ক্যালোরি খেতে সহায়তা করবে এবং স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভাসে অভ্যস্ত করবে।

অ্যাভোক্যাডো উচ্চ ফাইবার এবং নিম্ন কার্বস বিশিষ্ট হয়ে থাকে, যা ওজন হ্রাসের প্রক্রিয়াকে সহজ করে তোলে।

১২. সুস্বাদু অ্যাভোকাডো আপনার ডায়েটে অন্তর্ভুক্ত হতে পারে খুব সহজেই:

অ্যাভোক্যাডো শুধুমাত্র স্বাস্থ্যকর নয়, এগুলি অবিশ্বাস্যরূপে সুস্বাদু এবং বিভিন্ন ধরণের খাবারের সাথেও খাওয়া যায়।

আপনি এগুলি সালাদ এবং বিভিন্ন রেসিপিতে যুক্ত করতে পারেন বা চামচ দিয়ে কেবল স্কুপ করেও খেতে পারেন।

এর একটি ক্রিমি ও চর্বিযুক্ত গঠন রয়েছে যা অন্যান্য উপাদানগুলির সাথে ভালভাবে মিশ্রিত হয়।

অ্যাভোক্যাডো পাকতে কিছুটা সময় নেয় এবং পাকলে কিছুটা নরম ধাচের হয়।

সর্বপরি, অ্যাভোক্যাডো হলো পুষ্টিতে ভরপুর একটি চমৎকার ফল যা আধুনিক ডায়েটের সকল ধরনের পুষ্টির অভাব পূরণ করতে সহায়তা করে। এটি খেতে যেমন দারুণ সুস্বাদু, তেমনই ওজন কমাতে বন্ধুত্বপূর্ণ ও হৃদপিণ্ডের জন্য বেশ স্বাস্থ্যকর।


2 comments:

লাবাং